ঘরে বসে অনলাইন ইনকাম করার সেরা ১০টি উপায় – ২০২৪
বর্তমান বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে প্রযুক্তির উপর। বর্তমানে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণেই অনলাইনে ইনকাম করা আগের থেকে বেশ সহজ হয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এই অনলাইন ইনকাম করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। মানুষ এখন অনলাইনে ইনকামের জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করছে। এখন যে কেউ চাইলেই ঘরে বসে নানা উপায়ে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে অনলাইন ইনকাম করতে পারেন। আপনি যদি অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে সঠিক একটি গাইড লাইন পেতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য, চলুন শুরু করা যাক…
অনলাইন ইনকাম কি?
মূলত তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ যে ধরনের আয় করে থাকে সেটিই আমাদের কাছে অনলাইন ইনকাম নামে পরিচিত। সহজভাবে বলতে গেলে অনলাইন ইনকাম হলো ইন্টারনেটের সাহায্যে অর্থ উপার্জনের একটি পদ্ধতি।
২০২৪ সালে অনলাইন ইনকামের সেরা ১০টি উপায়
অনলাইন থেকে ইনকাম করতে কেনা চায়! বর্তমান যুগে সবারই ইচ্ছে থাকে অনলাইন থেকে কিছু ইনকাম করার। বর্তমান সময়ে অনলাইন ইনকাম সোর্স অনেক রয়েছে কিন্তু তারমধ্যে ভালো বা খারাপও আছে। আজকে আমরা অনলাইন ইনকামের সেরা ১০টি উপায় সম্পর্কে জানবো, যেগুলো থেকে আপনি নিশ্চিন্তে আয় করতে পারবেন।
১. ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন ইনকাম
ঘরে বসে অনলাইন থেকে ইনকাম করার করার চিন্তা করলে যে বিষয়টি মাথায় আসে সেটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। বর্তমানে এটির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। আপনার যদি কোন নিদিষ্ট স্কিল বা দক্ষতা থাকে তবে আপনার জন্য অনলাইনে অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম উপায় হলো ফ্রিল্যান্সিং করা। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ দিয়ে থাকে।
তবে বর্তমান সময়ে প্রচুর ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যারা আপনাকে আপনার দক্ষতার ক্ষেত্রে যেমন: লেখালেখি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রোগ্রামিং বা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টে কাজ খুঁজে দেয়। এসব সাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ফাইভার ডটকম, আপওয়ার্ক ডটকম, ফ্রিল্যান্সার ডটকম ও ওয়ার্কএনহায়ার ডটকমে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যায়। দক্ষতা হিসাবে এসব সাইটি থেকে আপনি ঘন্টায় ৫ থেকে ১০০ অধিক ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
২. গ্রাফিক্স ডিজাইন করে অনলাইন ইনকাম
ফ্রিল্যান্সিং কাজের পাশাপাশি ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের ভালো একটি উপায় হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। একাজে আপনার দক্ষতা থাকলে আপনি যদি অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনার তৈরিকৃত ডিজাইন দিয়ে রাখেন তাহলে সেখান থেকেও আয় করা সম্ভব। এমনকি আপনার তৈরিকৃত একটি ডিজাইন অনেকবার বিক্রিও হবে, অর্থাৎ একটি ভালো ডিজাইন থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইনকাম হতে থাকে। অনলাইনে এ ধরনের অনেক ওয়েবসাইটে গ্রাফিক্সের কাজ বিক্রি করা যায়। এছাড়াও অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজানারদের চাহিদাও অনেক।
৩. ওয়েব ডিজাইন করে অনলাইন ইনকাম
বর্তমান সময়ে অনলাইনের কাজে ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইনের চাহিদাও অনেক। কোন কোন প্রজেক্টে ২০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত সহজে ইনকাম করা যায়। অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা প্রযুক্তি বিষয়ে তেমন ভালো জানে না। নিজেদের ওয়েবসাইট তৈরিতে তাদের ওয়েব ডিজানারের প্রয়োজন হয়। যারা ওয়েব ডিজানার হিসাবে কাজ করতে চান তারা নিজেদের ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকে ছোট একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। একটি ওয়েবসাইট তৈরীতে কোডিং আর ওয়েব ডিজাইন দুটিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়ও ওয়েবসাইট দেখাশোনা ও আপডেটের জন্য ওয়েব ডিজাইনারের প্রয়োজন হয়। ফলে ওয়েব ডিজাইনারকে বসে থাকতে হয় না, কাস্টমার ও কাজের উপর ভিত্তি করে ওয়েব ডিজাইনারের আয় বাড়তে থাকে।
৪. ইউটিউভিং করে অনলাইন ইনকাম
যারা ব্লগিং করতে স্বচ্ছন্দ নন, তারা ভিডিও তৈরি করে আয় করতে পারেন। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় ইউটিউবার রয়েছে। তাদের কারো কারো মাসে ইনকাম প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা। আপনিও চাইলে নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করে সেখান থেকে ইনকাম করতে পারেন। এজন্য আপনার অবশ্য সৃজনশীল ও ভালো এডিটিং নলেজ থাকতে হবে। আপনার ইউটিউব চ্যানেল কোন ক্যাটাগরির হবে এবং সেখানে কোর ধরনের ভিডিও পোস্ট করবেন, তা আগেই ঠিক করে রাখুন। যেসব বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি, সেই ধরনের ভিডিও পোস্ট না করলে মানুষ তা দেখবে না। আর ভিডিও না দেখলে আয়ও হবে না। আপনার চ্যানেলের সাবসক্রাইবার ও ভিডিও ভিউ সময় যত বাড়তে আপনার আয়ের সম্ভাবনাও তত বাড়তে থাকবে।
৫. সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনলাইন ইনকাম
আপনার যদি কোন বিশেষ প্রতিভা থাকে, যেমন: হাতের কারুকাজ বা গয়না তৈরী ইত্যাদি। তাহলে আপনি পণ্য তৈরি করে সেগুলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করে আয় করতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পরিকল্পকদের প্রচুর অর্থ প্রদান করে থাকে তাদের ব্র্যান্ডের প্রচার চালানোর জন্য। বিভিন্ন পোস্ট তৈরি, ভিডিওর মাধ্যমে ফেসবুকে বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রকাশ করে তা ভাইরাল করতে পারলে ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্যান-ফলোয়ার তৈরিসহ তাঁদের ধরে রাখতে প্রচুর ধৈর্য থাকা জরুরী।
৬. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনলাইন ইনকাম
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বর্তমানে সারা বিশ্বে অনেক জনপ্রিয় একটি অর্থ আয়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এই পদ্ধতিতে ইনকাম করতে গেলে নিজের ওয়েবসাইট বা ব্লগ প্রয়োজন। যখন ওয়েবসাইট বা ব্লগ শুরু হবে তখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লিংক তাতে যুক্ত করতে পারবেন। যখনই আপনার সাইটের মধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা কোনো দর্শক বা ভিজিটর কিনবেন, তখনই আপনার আয় আসতে শুরু করবে।
৭. কনটেন্ট রাইটিং করে অনলাইন ইনকাম
আপনি যদি লেখালেখিতে ভালো হন কিংবা একাধিক ভাষায় সাবলীলভাবে লিখতে পারেন, তাহলে সেই প্রতিভা ব্যবহার করে আপনি অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন। আটিংকেল লেখার মানের উপর ভিত্তি করে আপনার আয় আসবে। কাজ দাতা দিনির্ষ্ট নীতি মেনে লেখার জন্য বলতে পারেন। নিদির্ষ্ট বিষয় বা নিশ ধরে নিজের দক্ষতা বাড়াতে পারলে আপনার উপার্জনের ধারাও বেড়ে যাবে। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে এ ধরনের প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।
৮. ব্লগিং করে অনলাইন ইনকাম
অনেকেই আছেন শখ করে অনেক বিষয়ে লেখালেখি করেন। এই শকের বিষয়টিই যদি কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে অনলাইনে ইনকাম করতে পারবেন। ব্লগিং করেও অর্থ উপার্জন করার সুযোগ আছে। দুটি উপায়ে ব্লগিং করে আয় করা যায়। একটি হলো নিজের ব্লগ সাইট তৈরী করে ওয়ার্ডপ্রেস বা টাম্বলার প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে ব্লগিং শুরু করতে পারেন।
আবার চাইলে নিজে ডোমেন হোস্টিং কিনে ব্লগিং শুরু করতে পারেন। তবে নিজে ব্লগিং শুরু করতে গেলে কিছু পরিমান বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হবে। ডোমেন, হোস্টিং কিনতে হবে। তবে নিজে সবকিছু তৈরী করে ব্লগিং শুরু করাটাই বেশি ভালো। কারন, তখন আপনার ইচ্ছামত যা ইচ্ছা পরিবর্তন করতে পারবেন। বিজ্ঞাপন, ফেসবুকের ইনষ্ট্যান্ট আটিংকেল, পণ্যের পর্যালোচনা প্রভৃতি নানা উপায়ে ব্লগিং থেকে ইনকাম করতে পারবেন। তবে ব্লগিং করে আয় করতে গেলে হুট করেই রাতারাতি আয় আসবে না। আপনার এ জন্য প্রচুর সময় ও ধৈর্য থাকতে হবে।
৯. অনলাইন টিউটর
আপনি যদি কোন বিষয়ের উপর দক্ষ হন এবং সেটি অন্যদের শেখাতে আগ্রহী হন, সেক্ষেত্রে আপনি শিক্ষাথীদের অনলাইন টিচিং করিয়ে ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অনলাইন টিউটরদের চাহিদা এখন অনেক বাড়ছে। সব বয়সী শিক্ষার্থীদের আপনি শিক্ষা প্রদান করতে পারেন। প্রচুর অনলাইন টিচিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা আপনাকে সারা বিশ্ব থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযোগ হতে দেয়। যেমন: টুইটর ডটকম, চেঙ টিউটর, ইউডেমি ইত্যাদি।
১০. জরিপ, সার্চ রিভিউ
অনলাইন জরিপে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা গ্রাহকের কাছ থেকে ফিডব্যাক পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের জরিপ করে থাকে। এসব জরিপ সাধারণত পেইড হয়ে থাকে, চাইলে আপনিও এসব জরিপ করে প্রতি মাসে ভালো অংকের টাকা ইনকাম করতে পারেন। এ ছাড়া অনলাইন সার্চ ও পণ্যের পর্যালোচনা লিখে ইনকাম করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংকিং তথ্য দেওয়া লাগতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে কাজ করার সময় অবশ্যই সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। এবং কাজটি করার পূর্বে কোনটি প্রকৃত কাজ আর কোনটি স্ক্যাম সেটি ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নিয়ে কাজ করতে হবে।
টিপস: অনলাইন ইনকাম বর্তমানে বহুপ্রচলিত একটি বিষয় যা ঘরে বসেই ইনকাম এবং নিজেই নিজের কর্মসংস্থান তৈরি একটি মাধ্যম। অনলাইন ইনকাম করার বিভিন্ন সুযোগ থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার ফাঁদে পড়তে হতে পারে। অনলাইনে কাজ করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই এর ধরনের প্রতারণামূলক কাজের ক্ষেত্রে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে।