নতুন মনিটর কেনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি

0
338
নতুন মনিটর কেনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি-itpalacebd
নতুন মনিটর কেনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি-itpalacebd

নতুন মনিটর কেনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি

আমরা কোন নতুন কম্পিউটার কেনার আগে যে পরিমাণ রিসার্চ করে একটি কম্পিউটার কিনি তার থেকে ১০ ভাগের ১ ভাগও আমরা সময় দেই না নতুন মনিটর কিনার ক্ষেত্রে। কিন্তু কম্পিউটারের পাশাপশি মনিটরও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায় সময় রেজুলেশন বা অন্য কিছু বিবেচনা না করেই মনিটর কিনে ফেলি যা একবারেই উচিত নয়। আমরা যে উদ্দেশ্যে মনিটর কিনি সেই উদ্দেশ্যে বায়স্তবায়নের জন্য মনিটর কেনার আগে আমাদের অবশ্যই কিছু বিষয়ের উপর ভালোভাবে নজর দিতে হবে ।

নতুন মনিটর কেনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি-itpalacebd
নতুন মনিটর কেনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি-itpalacebd

কম্পিউটারে কাজের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদন হচ্ছে মনিটর। কম্পিউটারের ভালো পারফরম্যান্সের বিষয়গুলো ফুটে উঠে একটি মনিটরের মাধ্যমে। কম্পিউটারের কনফিগারেশন যদি হাই কোয়ালিটির হয়, আর মনিটর যদি লো কোয়ালিটির হয় তাহলে এটি আপনার কাজের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে না। তাই কাজের ধরন অনুযায়ী আপনাকে মনিটরের আকার ও রেজুলেশন কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর মনিটর আছে, এসব মনিটরগুলোর মধ্যে আপনার কোন ধরনের মনিটর প্রয়োজন, তা নিয়ে আপনি কি বিভ্রান্ত? বাজরের বিভিন্ন আকার রেজুলেশন ও বিভিন্ন মডেলের মনিটর দেখে আপনি যদি সমস্যায় পড়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

১. মনিটর এর সাইজ নির্বাচন করা:

বাজারে বিভিন্ন সাইজের মনিটর রয়েছে, ২০ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটর পেয়ে থাকবেন। এখান থেকে আপনি আপনার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সাইজের মনিটর বেছে নিতে পারেন।

মনিটর কেনার আগে আপনি অবশ্যই একটি বড় মনিটর বেছে নিতে চান। নতুন মনিটর কেনার আগে মনিটরের সাইজ নিয়ে মাথা ঘামায় না এমন লোকের স্যাংখ্যা একবারে নাই বললেই চলে। সকলেই বড় মনিটরকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আপনি নতুন মনিটর কেনার আগে অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত আপনি ওই মনিটরটি কি কাজে ব্যবহার করবেন। আপনি যদি ওই মনিটর দিয়ে কোন প্রফেশনাল কাজ করেত চান, যেমন: ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন বা ভিডিও গেম খেলতে চান অবশ্যই একটি বড় নিতে হবে।

বেশিরভাগ ভিজুয়াল এক্সপার্টরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, আপনি যদি আপনার কম্পিউটারের ডেক্সের সামনে বসে থাকে এবং আপনার স্ক্রিন থেকে একটি সাধারণ দূরত্বে থাকেন, তাহলে আপনার এবং আপনার চোখের জন্য ৩২ ইঞ্চি মনিটর হলো একটি আদর্শ মনিটর।

২. মনিটর এর রেজুলেশন:

অনেকেই আছেন মনিটরের সাইজ ও রেজুলেশন এই দুটিকে এক করে পেলেন। একটি বিষয় ভালো করে মনে রাখতে হবে মনিটরের সাইজ ও রেজুশেন কিন্তু এক জিনিস নয়। রেজুলেশন হলো মনিটরের একটি ছবি প্রদর্শনের পিক্সেল সংখ্যা। তবে মনিটরের রেজুলেশন প্রায় একটি মনিটরের সেলিং পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়। একটি হাই রেজুলেশনের মনিটরে অবশ্যই sharper ইমেজ তৈরি হবে, তবে আপনাকে কিছু ডাউনসাইড সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা একটি হাই রেজুলেশন মনিটর আপনার জন্য অতিরিক্ত সুবিধা থাকার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

আপনার যে সমস্যাগুলোর হতে পারে আইকন এবং Text সাইজ সমস্যা। আপনি যদি মনিটরের ডিসপ্লের সাইজ ফিজিক্যাল সাইজ না বাড়িয়ে শুধুমাত্র রেজুলেশন বাড়ান তাহলে মনিটরে সবকিছুই অনেক ছোট দেখাবে।েএ বিষয়টি কারো কারো ক্ষেত্রে তেমন একটা সমস্যা নাও হতে পারে, তবে যারা দুর্বল দৃষ্টিশক্তির ব্যবহারকারী আছেন,তাদের জন্যে এই হাই রেজুলেশন ও ছোট ডিসপ্লে সাইজ বড় সমস্যা হতে পারে।

৩. মনিটর ব্যবহারের উদ্দেশ্য

উপরে উল্লেখিত দুটি বিষয়ের মাধ্যমে আপনাকে নিশ্চত হতে হবে যে, আপনি কোন উদ্দেশ্যে মনিটর কিনছেন এবং মনিটরটি কোন কাজে ব্যবহার করবেন। মনিটর কেনার জন্যে দোকানে যাওয়ার পূর্বে প্রথমিকভঅবে আপনার কিছু বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নিতে হবে। আপনার কাজ ও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করবেন যে, আপনি কোন সাইজের ও রেজুলেশনের মনিটর নিবেন।

নিচে তিনটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

ক) আপনি যদি বাসা-বাড়িতে মুভি, সাধারণ ভিডিও দেখার জন্য কম্পিউটারের মনিটর নিয়ে থাকেন তাহলে আপনি মনিটরের ডিসপ্লের সাইজ এবং কালারের দিকগুলো বিবেচনা করলেই হবে।

খ) আবার আপনি যদি গেমিংয়ের জন্য মনিটর কিনতে চান, তাহলে মনিটরের ডিসপ্লের Refresh rate, Lower response time এসব দিকে নজর নিতে হবে। কেননা মনিটর ডিসপ্লের Refresh rate যতবেশি হবে, আপনি তত বেশি স্মুথভাবে গেমিং করতে পারবেন। Lower response time হলো আপনি গেমিং করার ক্ষেত্রে রিয়েল টাইম গেমিং অভিজ্ঞতা পাবেন।

গ) অপরদিকে আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ভিডিও এডিটিং এর মত কাজ করার কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে মনিটর ডিসপ্লের কালার accuracy দিকে নজর দিতে হবে। সাধারণত এসব কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা হাই কনটেস্ট ডিসপ্লেগুলো বেশি ব্যবহার করে থাকে। এধরনের কাজগুলোতে আইপিএস প্যানেলের মনিটরগুলো ভালো পারফর্ম করে থাকে।

৪. নতুন মনিটর কেনার সময় অন্যান্য যে ফিচারগুলো না দেখলেই নয়

আপনি যখন নতুন মনিটর কিনতে যাবেন, তখন কিছু পরিভাষা আপনার বুঝতে সমস্যা হতে পারে, যে বিষয়গুলো ঠিকমত না বোঝার কারনে আপনি সঠিক মনিটরটি বাছাই করতে সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই নিচে মনিটরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্পেসিফিকেশন উল্লেখ্য করা হলো:

  • Refresh rate: যেকোন মনিটরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রিফ্রেশ রেট। একটি মনিটর প্রতি সেকেন্ডে কতগুলো ফ্রেন দেখাতে পারে তা হার্টজ বা কম্পঙ্ক দিয়ে পরিমান করা হয়। মনিটরের ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট যত বেশি হতে, একটি মনিটর প্রতি সেকেন্ডে তত বেশি ফ্রেম দেখাতে পারবে। অর্থাৎ বেশি রিফ্রেশ রেট মানে, বেশি ফ্রেম রেটের ভিডিও সুন্দর ও নিখুতভাবে দেখাবে। আপনি একটি নতুন মনিটর কেনার সময় অবশ্যই চেষ্টা করবেন 75Hz এর উপরে নেওয়ার এবং গেমারদের ক্ষেত্রে তা 140Hz নেয়া প্রয়োজন।
  • Response time:মনিটরের একটি পিক্সেল কালার পরিবর্তন করতে যে সময় লাগে তাকেই বলা হয় Response Time,অর্থাৎ কালো কালার থেকে সাদা কালারে পরিবর্তন হতে যে সময়কে বুঝায় তাই রেসপন্স টাইম।
  • Aspect ratio:বাংলাদেশে সাধারণত 16:9 aspect ratio এই মনিটরগুলো বেশি পাওয়া যায়। আর ল্যাপটপগুলোতে 3:2 aspect ratio এর ডিসপ্লে দেখতে পাওয়া যায়। তবে 16:9 aspect ratio ডিসপ্লেগুলো ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
  • Curvature: একটি Curvature মনিটর বা Curvature হল একটি কম্পিউটার মনিটর সমতল হওয়ার পরিবর্তে সামান্য Curvature হয়। বক্রতা ব্যাসার্ধ পরিমাপ করা হয়। বক্রতা রেটিংয়ের কিছু উদাহরন হলো: 1500R, 1800R এবং 2300R। বড় পর্দার কোন মনিটর ব্যবহার করার সময় চোঁখের উপর চাপ কমাতে এ ধরনের মনিটরগুলো ব্যবহার করা হয়। এধরনের মনিটরগুলোতে 1500R দ্বারা বুঝানো হয়, ডিসপ্লেটির বক্রতা কেমন হবে। এই সংখ্যা যত কম হয়, ডিসপ্লের বক্রতা তত বেশি হয়।
  • Brightness: মনিটর Brightness ক্ষেত্রে 250cd/m2 এই ধরনের কোন মনিটর কেনা ঠিক হবে না।
  • Viewing angle: Viewing angle দ্বারা বুঝানো হয় আপনি কত ডিগ্রি কোণ থেকে আপনার মনিটরের ডিসপ্লে দেখতে পাবেন। নতুন মনিটর কেনার সময় অবশ্যই আপনার সর্বনিম্ব ১৭০ ডিগ্রি Viewing angle মনিটর বাচাই করা উচিত।

৫. প্যানেল দেখে মনিটর নির্বাচন করা:

নতুন মনিটর কেনার সময় আপনাকে বিভিন্ন প্যানেল টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে হবে। প্যানেলে সাধারণ টাইপ হলো TN বা Twisted Nematic টেকনোলজি। সাম্প্রতিক সময়ে TN প্যানেলগুলোকে IPS বা In-Plane Switching স্ক্রিন দ্বারা স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

বর্তমানে আইপিএস প্যানেলের মনিটরগুলো বাজারে বেশ জনপ্রিয়। কারন আইপিএস প্যানেলের মনিটরগুলো Accurate color প্রর্শনের ক্ষমতা এবং wide viewing angle আছে।

VA প্যানেলগুলো TN এবং IPS প্যানেলগুলোর মধ্যে একটি কম্প্রোমাইজ অফার করে। TN এর তুলনাই VA প্যানেলের কালার এবংviewing angle ভালো। কিন্তু VA প্যানেলের রিফ্রেশ রেট IPS প্যানেল থেকে কম।

শেষকথা: প্রিয় পাঠক আশা করি আজকের আর্টিকেল আপনি একটি নতুন মনিটর নেওয়ার আগে কি কি জানা প্রয়োজন সে সম্পর্কে একটি সঠিক ধারনা পেছেন। তবে আপনি কেনার জন্য যে মডেলের মনিটরটি পছন্দ করবেন, অবশ্যই কেনার আগে সেটি সম্পর্কে আপনি ইউটিউবে রিভিউ দেখে নিবেন। যে কোন প্রয়োজনের আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আজকের মত এখানেই শেষ করছি, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ, ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here