পুরাতন আইফোন কেনার আগে যা আপনার জানা জরুরী
আজকের আর্টিকেলটা মূলত যারা পুরাতন আইফোন বা সেকেন্ড হ্যান্ড পিওর আইফোন কেনার জন্য চিন্তা ভাবনা করেছিলেন তাদের জন্য। অবশ্যই পুরাতন আইফোন কেনার জন্য বেশ কিছু বিষয়ের দিকে আপনার নজর দেওয়া উচিত, তানাহলে আপনি ঠকলেও ঠকতে পারেন। বর্তমান সময়ের স্মার্টফোন জগতে আইফোনের অবস্থান যে প্রথম স্থান দখল করে রেখেছে যে বিষয়ে কারোই দ্বিমত কাথার কথা নয়। শুরু থেকেই আইফোন বাজারে এবং ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত আইফোনগুলি সর্বদা চাহিদার শীর্ষে থাকে, আপনি যদি স্বল্প বাজেটে অ্যাপল স্মার্টফোন ব্যবহার করতে চান তাহলে পুরাতন আইফোন ক্রয় করাই হচ্ছে আপনার জন্য একমাত্র সমাধান। তবে পুরাতন আইফোন ক্রয়ের সময় টাকা হস্তান্তরের আগে আপনার কিছু জিনিস পরীক্ষা করা উচিত।
কিভাবে আইফোন চেক করব
আইফোনের আসল মালিকানা পরীরক্ষা করা :
পুরাতন আইফোন কেনার পূর্বে আবশ্যই নিশ্চিত হোন সেটি আসল মালিক সম্পর্কে। অনেক সময় চুরি হওয়া আইফোন অল্প দামে ক্রয় করে আপনি পড়তে পারেন আইনি ঝামেলায়।
পুরাতন আইফোনের আসল মালিকানা নিশ্চিত করতে IMEI নাম্বার পরীক্ষা: আইফোনের পিছনের দিকের লেবেল থেকে বা “Settings” -> “General” -> “About” মেনু থেকে IMEI (International Mobile Equipment Identity) নাম্বার পাওয়া যায়, যা সাধারণত ১৫ ডিজিটের সংখ্যা হয়ে থাকে। ফোনটি চেক করতে https://iphoneox.com/ এই ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে IMEI কোডটি লিখনু এরপর নীচে দেওয়া ছবির মতো তথ্য দেখতে পাবেন। ফোনটি কবে কিনেছে একদম দিন তারিখসহ দেখেতে পাবেন। সিম ট্রের সাথে IMEI নাম্বার ম্যাচ করে কিনা সেটিও চেক করতে পারেন। ম্যাচ না করলে ভাববেন চোরাই ফোন নাহলে থার্ড পার্টি কোন ফ্যাক্টরির রিফারবিশড ফোন। অফিশিয়াল ডকুমেন্টস চেক: যদি সম্ভব হয়, বিক্রেতার কাছ থেকে আইফোনের অফিশিয়াল ডকুমেন্টস চেক করুন, যেমনঃ বিক্রয়ের রিসিপ্ট, আইফোনের গ্যারান্টি এবং ব্যবহারকারীর ম্যানুয়াল।
অ্যাক্টিভেশন লক পরীক্ষা করা:
আইফোনের একটি অন্যতম নিরাপত্তা ফিচার হচ্ছে এর অ্যাক্টিভেশন লক বা আইক্লাউড। ফাইন্ড মাই আইফোন ফিচারের মাধ্যমে ফোনের মালিক তার অ্যাপেল আইডি দিয়ে সাইন-ইন করে ফোনটি লক করে রাখতে পারবেন। পরবর্তীতে কেউ ফোনটি চালু করতে চাইলে ঐ আইক্লাউড লক না খুলে ফোনটি ব্যবহার করতে পারবে না। ফোনটি আনলক করতে হলে আইক্লাউড আইডি দিয়েই ফোনটি আনলক করতে হবে।
তাই পুরাতন আইফোন কেনার আগে ফোনটি হাতে নিয়েই দেখবেন আইক্লাউড লক আছে কিনা। “Settings” -> “iCloud” কোন একটি ইমেইল এড্রেস যদি দেখেন তাহবে বুঝে নিবেন ফোনটি লকড। তাই পুরাতন আইফোন সেটটি বুঝে নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই বিক্রেতাকে বলবেন আপনার সামনেই উক্ত আইক্লাউডের একাউন্টটি ডিলিট করে দিতে। আর যদি আপনি আইক্লাউড একাউন্টটি ডিলিট করাতে ভুলে যান বা বিক্রেতা কোন কারনে ডিলিট না করে আপনাকে ফোনটি গছিয়ে দেয়, তাহলে এই ফোন নিয়ে আপনি বড় কোন ঝামেলায় পড়তে পারেন।
ব্যাটারি হেলথ পরীক্ষা করা:
লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সময়ের সাথে সাথে ক্ষয় হয় এবং যেকোন পুরাতন আইফোনের একটি ব্যাটারি থাকতে বাধ্য যা তার মূল ক্ষমতার ১০০% ধরে রাখতে পারে না। তাই পুরাতন আইফোন কেনার আগে অবশ্যই ওই ফোনের ব্যাটারি হেলথ কতটুকু তা জেনে নিন। দুটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক্স চেক করতে আপনি “Settings” -> “Battery” -> “Battery Health সেকশনে গিয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতা দেখতে পারবেন। সর্বোচ্চ ক্ষমতা আপনাকে একটি মোটামটি ধারনা দিবে যে ব্যাটারিটি বর্তমানে কতটা চার্জ রাখতে সক্ষম। যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল ব্যাটারির কর্মক্ষমতা।
সাধারণত একটি নতুন আইফোনের ব্যাটারি হেলথ ১০০% থাকে। পুরাতন আইফোন এর ব্যাটারি হেলথ দেখেই ফোনটি কত সময় ধরে ব্যবহার হয়েছে তার একটি ধারনা করা যায়। উল্লেখ্য ব্যাটারি রিপ্লেস করেও পুনঃরায় সম্পূর্ণ ব্যাটারি হেলথ ফিরে পাওয়া সম্ভব।
সিম সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটি করীক্ষা করুন:
মাঝেমধ্যে অভ্যান্তরীণ ড্যামেজ বা সফটওয়্যার বাগ এর কারণে পুরাতন আইফোনে সিম কাজ করেনা। এছাড়াও অনেক পুরাতন আইফোনে লকড বাইপাস পদ্ধতি ব্যবহার হয়। যার কারনে ফোনটি ব্যবহার করা গেলেও ফোনে সিম কার্ড সাপোর্ট করে না। তাই পুরাতন আইফোন কেনার আগে ভালোভাবে নিশ্চত হোন, যে ফোনটি আপনি কিনতে যাচ্ছেন সেই ফোনটিতে সিম কার্ড ঠিকমত কাজ করে কিনা।
হার্ডওয়্যারের অবস্থা চেক করা:
পুরাতন আইফোনের বডিতে ছোটখাট স্ক্র্যাচ বা দাগ থাকা সাধারণ ব্যপার। তবে এসব কোন ভারী আঘাতের কারনে হয়েছে কিনা, ফোন কেনার পূর্বে সেটি নিশ্চত হওয়া জরুরী। তাই পুরাতন আইফোন কেনার পূর্বে অবশ্যই ফোনের বডি কন্ডিশন, ইয়ারফোনের জ্যাক, চাজিং পোর্ট, ফোনের ফিজিক্যাল বাটন, ফেইস আইডি, অডিও, ভিডিও প্লেব্যাক চেক করুন এবং ক্যামেরা দিয়ে স্টিল ছবি এবং ভিডিও করে ভালোভাচে যাচাই করেন নিবেন।
স্টোরেজ ক্যাপাসিটি চেক করা:
যেকোন আইফোন মডেলই বিভিন্ন স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যায়, ১৬ জিবি থেকে শুরু করে ৫১২ জিবি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই পুরাতন আইফোন কেনার পূর্বে আইফোনের স্টোরেজ চেক করে নিবেন যে যত জিবি বিক্রেতা বলেছে ঠিক তত জিবি স্টোরেজ আছে কিনা। চেক করুন “Settings” -> “General” -> “About” এই এড্রেস গিয়ে। তবে বর্তমান সময় বিবেচনা করে ৬৪ জিবি থেকে কম স্টোরেজযুক্ত আইফোন না কেনাই উত্তম।
পুরাতন আইফোন এর দাম কত:
যেকোন কিছুর কেনার পূর্বে তার দাম সম্পর্কে একটি ধরনা নিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। পুরাতন আইফোনগুলোর দাম খুবই কনফিউজিং হয়ে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় দেখেবেন বিভিন্ন দাম ও পার্থক্য। আপনি যে পুরাতন আইফোনটি কিনতে যাচ্ছেন সেটির দাম নতুন আইফোন থেকে তুলনায় কম হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে আসল বাজারদর থেকে যদি অতিরিক্ত কম দামে পুরাতন আইফোন কেনার জন্য পান তবে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।
আইফোন বাইপাস মানে কি
বাইপাস হলো আমরা যদি আমার অ্যাপেল আইডি বা পাসওয়ার্ড ভুলে যাই তখন নতুন কোন অ্যাপেল আইডি বা পাসওয়ার্ড দিয়ে ওই ফোনে লগন করতে পারি না। যতক্ষন পর্যন্ত পূর্বের অ্যাপেল আইডি বা পাসওয়ার্ড না দিব ততক্ষন পর্যন্ত ফোনটি আনলক হবে না। কিন্তু মানে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে ফোনটি আনলক করা হয় তাকেই বলা হয় বাইপাস। এই বাইপাসের মাধ্যমে পূর্বে অ্যাপেল আইডিটি রিমুভ করা হয়। পূর্বে অ্যাপেল আইডিটি রিমুভ করার পর আপনি পুনঃরায় নতুন করে অ্যাপেল আইডি তৈরী করতে পারবেন। সাধারনত আইফোন চুরি বা ছিনতাইয়ের পর বাইপাস করা হয়ে থাকে।
পুরাতন আইফোনে নিরাপত্তা ঝুঁকি
ফোনে মানুষের ব্যক্তিগত অনেক তথ্য থাকাটাই স্বাভাবিক। যার কারনে সবাই চায় তাদের ফোনটির নিরাপত্তা নিয়ে যেন কোন বিঘ্ন না ঘটে। ফোন কোম্পানীগুলো এবিষয়ে নিশ্চয়তা দিলেও মাঝেমধ্যে দু-একটি ঘটনা ঘটেই যায়। তবে অন্যান্য ফোন কোম্পানীগুলো থেকে অ্যাপেলের তৈরি পণ্যগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে তারা কঠোর সচেতন থাকে বিষয়টি সকলেরই জানা। তাই পুরাতন আইফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি কখনো নিরাপত্তার ঝুঁকেত পরেন তাহেল ফোনটি আপডেট করে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাপেল প্রতিষ্ঠান।
শেষকথা: একটি পুরাতন এন্ড্রয়েড ফোন কেনার চেয়ে একটি পুরাতন আইফোন কেনা অনেকটাই জটিল একটা ব্যাপার। তাই পুরাতন আইফোন কেনার সময় অবশ্যই উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিচার বিবেচনা করে ফোনটি কিনবেন।
টিপস: পুরাতন আইফোনটি কেনার পর অবশ্যই বিক্রেতার নিকট থেকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র (ভোটার আইডি) কার্ডের ফটোকপি নিবেন। আপনার কাছে সে পুরাতন আইফোন বিক্রি করেছে সেটাও সেঅখনে উল্লেখ থাকবে ও তার স্বাক্ষর থাকবে তারিখসহ। ভোটার আইডি কার্ডটি যাচই করেন নিবেন। কেননা বিক্রেতা প্রতারক হলে অন্য কারো ভোটার আইডি গছিয়ে দিতে দেয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। সবচেয়ে ভালো হয় তার বাসা চিনে রাখলে, তাই প্রথমে চেষ্টা করতে তার বাসায় গিয়ে ফোন দেখার।